আমাদের নবি মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাঃ কিসের তৈরি
রাসুল (সাঃ) নুরের তৈরীঃ
· নবী করিম (সঃ) যে নুরের তৈরি তার দলিল,,,,,,,,
কোরআন শরীফের আলোকেঃ---
আল্লাহ তায়া’লা ইরশাদ করেন-
قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين- অর্থঃ নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট আল্লাহর পক্ষ থেকে একটা নূর এবং স্পষ্ট কিতাব এসেছে।। (সূরা মায়িদা আয়াত- ১৫) আলোচ্য আয়াতে নূর দ্বারা নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বুঝানো হয়েছে। নিম্নে আরো কয়েকটি প্রসিন্ধ তাফসীরের আলোকে দলিল উপস্থাপন করা হলঃ-
দলিল নং ১ বিশ্ব বিখ্যাত মুফাসসিরে কোরআন হযরত ইবনে আববাস (রাঃ) এর বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে আববাস এর মধ্যে আছে-
قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين يعني محمدا صلي الله عليه ؤسلم- অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। (তাফসীরে ইবনে আববাস পৃষ্ঠা ৭২)।
দলিল নং ২ ইমাম আবু জাফর মুহাম্মদ ইবনে জারীর আত্-তবারী (রা) তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ইবনে জারীর এর মধ্যে বলেন-
قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين يعني باالنؤر محمدا صلي الله عليه ؤسلم الذي انار الله به الحق واظهربه الاسلام ومحق به الشرك- অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন, যে নূর দ্বারা আল্লাহ সত্যকে উজ্জ্বল ও ইসলামকে প্রকাশ করেছেন এবং শিরিককে নিশ্চিহ্ন করেছেন। ( তাফসীরে ইবনে জারীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৮৬, সূরা মায়িদা আয়াত ১৫)।
দলিল নং ৩ মুহীউস্সুন্নাহ আল্লামা আলাউদ্দীন আলী ইবনে মুহাম্মদ (রাঃ) (যিনি ‘খাজিন’ নামে পরিচিত) তাফসীরে খাজেনের মধ্যে বলেন-
قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين يعنى باالنؤر محمدا صلي الله عليه وسلم انما سماه الله نور الانه يهداى بالنور في الظلام- অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। আল্লাহ তায়া’লা তাঁর নামকরণ করেছেন নূর, কারণ তাঁর নূরেতে হেদায়ত লাভ করা যায়। যেভাবে অন্ধকারে নূর দ্বারা পথ পাওয়া যায়। (তাফসীরে খাজিন ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৭)।
দলিল নং ৪ ইমাম হাফেজ উদ্দীন আবুল বারাকাত আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ আন- নাসাফী (রা) এই আয়াত শরীফ ( قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين) প্রসঙ্গে বলেন-
والنور محمد عليه والسلام لانه يهتداي به كما سمي سراجا منيرا- আর নূর হলেন মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। কেননা তাঁর নূরেতে হেদায়ত লাভ করা যায়, যেমন তাঁকে উজ্জ্বল প্রদীপ বলা হয়েছে। (তাফসীরে মাদারিক ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৪১৭)।
দলিল নং ৫ ইমামুল মুতাকাল্লেমীন আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী (রা) এই আয়াত শরীফ ( قد جاءكم من الله نور و كتاب مبين) প্রসঙ্গে বলেন-
ان المراد بالنور محمد صلي الله عليه و سلم وبالكتاب القران- অর্থঃ নিশ্চয়ই নূর দ্বারা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং কিতাব দ্বারা আল কোরআন মজীদকে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে কবীর ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৫, সূরা মায়িদা আয়াত ১৫)। আর যারা বলে যে ‘নূর ও কিতাবে মুবীন’ দ্বারা কুরআন মজীদকেই বুঝানো হয়েছে, ইমাম রাযী (রা) সে সম্পর্কে বলেন-
هذا ضعيف لان العطف يوجب المغايرة بين المعطوف والمعطوف عليه- এই অভিমত দুর্বল, কারণ আতফ (ব্যাকরণগত সংযোজিত) মা‘তুফ (সংযোজিত) ও মা‘তুফ আলাইহি (যা তার সাথে সংযোজন কারা হয়েছে ) এর মধ্যে ভিন্নতা প্রমাণ করে। (তাফসীরে কবীর ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৯৫)।
দলিল নং ৬ ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রা) বলেনঃ
قد جاءكم من الله نور هو نور النبى صلي الله عليه وسلم- অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর এসেছে, তা হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নূর মোবারক। (তাফসীরে জালালাইন শরীফ পৃষ্ঠা ৯৭)
দলিল নং ৭ আল্লামা মাহমূদ আলূসী বাগদাদী (রা) বলেন-
قد جاءكم من الله نور هو نورعظيم هو نور الانوارالنبى المختار صلى الله عليه وسلم الى ذهب قتادة والزجاج- অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে মহান নূর এসেছে । আর তিনি হলেন নূরুল আনোয়ার নবী মোখতার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। এটাই হযরত কাতাদাহ ও যুজাজের অভিমত। (তাফসীরে রুহুল মাআনী ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৭)।
দলিল নং ৮ আল্লামা ইসমাঈল হক্কী (রা) বলেন- قيل المراد باالاول هو الرسول صلى الله عليه وسلم وبالثانى القران- অর্থঃ বলা হয়েছে যে, প্রথমটা অর্থাৎ নূর দ্বারা রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বুঝানো হয়েছে এবং দ্বিতীয়টা অর্থাৎ কিতাবে মুবীন দ্বারা কুরআন কে বুঝানো হয়েছে। (তাফসীরে রুহুল বয়ান ২খন্ড, পৃষ্ঠা ২৬৯) আর অগ্রসর হয়ে বলেন-
سمى الرسول نورا لان اول شيئ اظهره الحق بنور قدرته من ظلمة العدم كان نور محمد صلي الله عليه و سلم كما قال اول ما خلق الله نورى- অর্থ: আল্লাহ তায়া‘লা রসূল আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম রেখেছেন নূর। কেননা আল্লাহ তায়া‘লা তাঁর কুদরতের নূর থেকে সর্বপ্রথম যা প্রকাশ করেছেন তা তো মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নূর মোবারক। যেমন তিনি ফরমায়েছেন- আল্লাহ তায়া‘লা সর্বপ্রথম আমার নূর মোবারক কে সৃষ্টি করেছেন। (তাফসীরে রুহুল বয়ান ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৩৬৯)।
দলিল নং ৯ ইমাম মুহীউস সুন্নাহ আবু মুহাম্মদ আল- হোসাইন আল-ফাররা আল-বাগাভী (রা) বলেন-
قد جاءكم من الله نور يعنى باالنؤر محمدا صلي الله عليه وسلم- অর্থঃ নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট হতে তোমাদের কাছে নূর অর্থাৎ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসেছেন। (তাফসীরে মাআলিমুত তান্যীল, ২য়
খন্ড, পৃষ্ঠা ২৩, তাফসীরে খাযিনের পাদ টীকা
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নূরঃ- সুরা মায়েদা পারা ৬, ১৫ নং আয়াতে নূরের ব্যাখ্যাঃ- ১। তাফসীরে মারেফুল কোরআন পৃষ্ঠা ৫৪। ২। তাফসীরে আবি সউদ ২য় খন্ড, পৃ- ২৫১, ৩। তাফসীরে রুহুল বয়ান ২য় খন্ড, পৃ- ৩৬৯, ৪। তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১ম খন্ড, পৃ- ৩৬০, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৭, ৫। তাফসীরে ইবনে জারীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ- ৮৬, ৬। তাফসীরে কবীর ১১তম খন্ড, পৃ- ১৬৩, ৭। তাফসীরে কুরতুবী ৬ষ্ঠ খন্ড পৃ- ১১৮, ৯। তাফসীরে বায়জাভী ১ম খন্ড, পৃ- ৬৪, ১০। তাফসীরে মাজহারী ৩য় খন্ড, পৃ- ৬৮, ১১। তাফসীরে কবীর ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ- ৪৬২, ১২। ছফওয়াতুত তাফাসীর ২য় খন্ড, পৃ- ১৪০, ১৩। তাফসীরে দুররে মানসুর ২য় খন্ড, পৃ- ১৮৭, তাফসীরে নূরুল কোরআন ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ১৬১, তাফসীরে নঈমী ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯৫। সূরা তাওবা পারা ১০, ৩২ নং আয়াতে নূরের ব্যাখ্যাঃ- ১। তাফসীরে দুররে মানসুর ৩ খন্ড, পৃ- ২০১, ২। তাফসীরে কবীর ১৬ম খন্ড, পৃ- ৩৪, ৩। তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৪ম খন্ড, পৃ- ৪৮। সুরা নূর পারা ১৮, আয়াত নং ৩৫ঃ- ১। তাফসীরে ইবনে আববাস ৪র্থ খন্ড, পৃ- ২৪, ২। তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১০ম খন্ড, পৃ- ১৬৬। সুরা আহযাব আয়াত নং ৪৬ঃ- ১। তাফসীরে আহকামুল কোরআন লিল ইবনুল আরাবী ৩য় খন্ড, পৃ- ১৫৪৬, ২। তাফসীরে মাওয়ারদী ৪র্থ খন্ড, পৃ- ৪১১।
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্নিত নূরের হাদিসখানা জাল নয়, সনদ সহীহ,রাবীগন নির্ভরযোগ্য এবং মুসান্নাফ কিতাবে এই হাদিস আছে এবং ছিল তার প্রমান :(১ম পর্ব দেখুন)
💜নুর সম্পর্কিত বিখ্যাত হাদিসখানা হল:
ﻓﻘﺪ ﺃﺧﺮﺝ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﺮﺯﺍﻕ ﺑﺴﻨﺪﻩ ﻋﻦ ﺟﺎﺑﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻷﻧﺼﺎﺭﻱ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ ﻗﺎﻝ : “ﻗﻠﺖ: ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﺄﺑﻲ ﺃﻧﺖ ﻭﺃﻣﻲ ﺃﺧﺒﺮﻧﻲ ﻋﻦ ﺃﻭّﻝ ﺷﻲﺀ ﺧﻠﻘﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺒﻞ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ؟ ﻗﺎﻝ : ﻳﺎ ﺟﺎﺑﺮ ﺇﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺧﻠﻖ ﻗﺒﻞ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ ﻧﻮﺭ ﻧﺒﻴﻚ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠّﻢ ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻩ ﻓﺠﻌﻞ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻨﻮﺭ ﻳﺪﻭﺭ ﺑﺎﻟﻘﺪﺭﺓ ﺣﻴﺚ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ، ﻭﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻮﻗﺖ ﻟﻮﺡ ﻭﻻ ﻗﻠﻢ ﻭﻻ ﺟﻨﺔ ﻭﻻ ﻧﺎﺭ ﻭﻻ ﻣﻠﻚ ﻭﻻ ﺳﻤﺎﺀ ﻭﻻ ﺃﺭﺽ ﻭﻻ ﺷﻤﺲ ﻭﻻ ﻗﻤﺮ ﻭﻻ ﺇﻧﺲ ﻭﻻ ﺟﻦ، ﻓﻠﻤﺎ ﺃﺭﺍﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺃﻥ ﻳﺨﻠﻖ ﺍﻟﺨﻠﻖ ﻗﺴﻢ ﺫﻟﻚ ﺍﻟﻨﻮﺭ ﺃﺭﺑﻌﺔ ﺃﺟﺰﺍﺀ : ﻓﺨﻠﻖ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻷﻭّﻝ ﺍﻟﻘﻠﻢ، ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﺍﻟﻠﻮﺡ، ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﺍﻟﻌﺮﺵ، ﺛﻢ ﻗﺴﻢ ﺍﻟﺠﺰﺀ ﺍﻟﺮﺍﺑﻊ ﺃﺭﺑﻌﺔ ﺃﺟﺰﺍﺀ: ﻓﺨﻠﻖ ﻣﻦ ﺍﻷﻭﻝ ﺣﻤﻠﺔ ﺍﻟﻌﺮﺵ، ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺜﺎﻧﻲ ﺍﻟﻜﺮﺳﻲ، ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺜﺎﻟﺚ ﺑﺎﻗﻲ ﺍﻟﻤﻼﺋﻜﺔ
হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হইতে বর্ণিত আছে,“তিনি বলেন-আমি আরজ করলাম,ইয়া রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম),আঁপনার উপর আমার পিতা মাতা উৎসর্গিত হউক, আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম কোন বস্তুটি সৃষ্টি করেছেন?
উত্তরে নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:হে জাবের! আল্লাহ তা’আলা সর্বপ্রথম সমস্ত বস্তুর পূর্বে তাঁর নূর হতে তোমার নবীর নূর পয়দা করলেন। তারপর আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী সেই নূর পরিভ্রমণ করতে লাগলো। ওই সময় না ছিল লউহে-মাহফুজ, না ছিল কলম, না ছিল বেহেস্ত, না ছিল দোজখ,না ছিল ফেরেশতা, না ছিল আকাশ, না ছিল পৃথিবী,না ছিল সূর্য, না ছিল চন্দ্র, না ছিল জ্বিন জাতি,না ছিল মানবজাতী। অতঃপর যখন আল্লাহ তা’আলা অন্যান্য বস্তু সৃষ্টি করার মনস্ত করলেন, তখন ওই নূর কে চার ভাগ করে প্রথম ভাগ দিয়ে কলম, ২য় ভাগ দিয়ে লউহে-মাহফুজ, ৩য় ভাগ দিয়ে আরশ সৃষ্টি করলেন।অবশিষ্ট এক ভাগকে আবার চার ভাগে ভাগ করে ১ম ভাগ দিয়ে আরশ বহনকারী ফেরেশতা,২য় ভাগ দিয়ে কুরছি, ৩য় ভাগ দিয়ে অন্যান্য ফেরেশতা সৃষ্টি করলেন।২য় চার ভাগের অবশিষ্ট এক ভাগ কে আবার পুনরায় চার ভাগ করে ১ম ভাগ দিয়ে আকাশ, ২য় ভাগ দিয়ে জমিন,৩য় ভাগ দিয়ে বেহেস্ত-দোজখ সৃষ্টি করলেন।অবশিষ্ট এক ভাগ কে আবার চার ভাগে ভাগ করে ১ম ভাগ দিয়ে মোমেনদের নয়নের দৃষ্টি,২য় ভাগ দিয়ে কলবের নুর, ৩য় ভাগ দিয়ে তাদের মহব্বতের নূর তথা তাওহিদী কালেমা “লা ইলাহা ইল্লালাহু মুহাম্মুদুর রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ” সৃষ্টি করলেন এবং বাকী এক ভাগ দিয়ে সমস্ত কিছু সৃষ্টি করলেন
[মূলসূত্রঃ-মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, ভলি-০১, পৃ-৯৯, হাদিস নং-১৮; এই সহীহ হাদীসের কিতাবটি ইমাম বুখারী (রঃ) এঁর দাদা উস্তাদ মুহাদ্দীস আব্দুর রাজ্জাক (রঃ) কর্তৃক রচিত; প্রকাশনী-দার আল মুহাদ্দীস,রিয়াদ,সৌদি আরব।]
✌বি:দ্র: খুশির খবর এই যে, বহু বছর পর মুসান্নাফে অাব্দুর রজ্জাক সম্পাদিত অাসল কিতাবের নুরের অধ্যায়টি বর্তমানে উদ্ধার করা হয়েছে তা ইস্তাম্বুলের জাদুঘরে সংরক্ষিত অাছে।
💜হাদিসের সনদ নিম্নরূপ💜
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
||
জাবির বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়্যাল্লাহু আনহু
||
মুহাম্মাদ বিন মুঙ্কদার রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
||
মা’মার বিন রাশীদ
||
আব্দুর রাজ্জাক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি
🌹সনদের মান পর্যালোচনা🌹
*(ক.) হাফেজে হাদিস মুহাদ্দীস আব্দুল হক দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর সুবিখ্যাত সিরাত গ্রন্থ ‘মাদারিজ নব্যুওত’ গ্রন্থে হাদীসটিকে হাসান ও সহীহ বলেছেন।
*(খ.) আহমাদ ইবন সালীহ (রহ:) বলেন, “আমি একবার আহমাদ বিন হাম্বল (রহ:) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি হাদীস শাস্ত্রে আব্দুর রাজ্জাকের থেকে ভালো অার কাউকে পেয়েছেন? আহমাদ বিন হাম্বল (রঃ) বলেন, না”।
[আসকলানী, তাহজিবুত তাহজিব ২/৩৩১]
*(গ). হাদীসটির একটি রাবী হলেন মা’মার বিন রাশীদ। উনার সম্পর্কে আহমাদ বিন হাম্বল (রহ:) বলেন, আমি বসরার সকল হাদীস শাস্ত্রের বিশেষজ্ঞের থেকে মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাকে মা’মার বিন রাশীদ এর সূত্রে পাওয়া হাদীসগুলো পছন্দ করি।
✌ইমাম ইবন হাজর আসকলানী (রঃ) উনাকে দক্ষ মুখস্তবীদ, নির্ভরযোগ্য বলেন।
[আসকলানী, তাহজিবুত তাহজিব ১/৫০৫]
✌মা’মার বিন রাশীদ সূত্রে বর্ণিত বুখারী শারীফের হাদীস সংখ্যা প্রায় ২২৫ এবং মুসলিম শারীফে বর্ণিত হাদীস সংখ্যা প্রায় ৩০০।
*(ঘ.) হাদীসটির আরেক রাবী হলেন মুহাম্মাদ বিন মুকদার। ইমাম হুমায়দি বলেন, মুকদার একজন হাফিজ ইমাম জারাহ তাদীল ইবন মা’ঈন বলেন, উনি নির্ভরযোগ্য।
[আসকলানী, তাহজিবুত তাহজিব ভলি ০৯/১১০৪৮]
🌹মুকদার থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা বুখারী শরীফে ৩০টি এবং মুসলিম শরীফে ২২টি।
*(ঙ.) আর জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু একজন সুপ্রসিদ্ধ সাহাবী। বুখারী ও মুসলিম শরীফের উনার থেকে বর্ণিত অনেক হাদীস আছে।
সুতরাং বুঝা গেল। হাদিসটির সকল রাবীই নির্ভরযোগ্য এবং উনাদের সূত্রে বুখারী ও মুসলিম শরীফে ও হাদিস বর্ণিত আছে।
*(চ.) আব্দুর রাজ্জাক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হলে মুসলিম উম্মাহের সর্বশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দীস ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর দাদা উস্তাদ। যদি বিতর্কের খাতিরে ধরেই নেই আব্দুর রাজ্জাক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর কিতাবে দুর্বল হাদিস উল্লেখ করেছেন তাহলে বলতে হয় বুখারী শরীফেও দ্বয়ীফ বা দুর্বল হাদিস আছে যেহেতু ইমাম বুখারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি হাদিস শাস্ত্রের জ্ঞান লাভ করেছেন আব্দুর রাজ্জাক রাহমাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছ থেকে।কিন্তু বুখারী শরীফে দুর্বল হাদীস আছে সেটা কেউই বলেন না।(ভুল বুঝবেন না,এখানে শুধুমাত্র যুক্তি সরুপ উদাহরন দেয়া হয়েছে )
🌹যেমন:আল মাওয়াহিব আল লাদুন্নিয়া’ (১:৫৫) গ্রন্থে লিপিবদ্ধ ইমাম কসতলানী (রহ:)-এর ভাষ্যানুযায়ী হযরত আবদ্ আল-রাযযাক (বেসাল-২১১ হিজরী) তাঁর রচিত ‘মুসান্নাফ’ কিতাবে ওপরের ঘটনাটি বর্ণনা করেন; ইমাম যুরকানী মালেকীও এটি বর্ণনা করেন নিজ ‘শরহে মাওয়াহিব’ পুস্তকে (মাতবা’আ আল-’আমিরা, কায়রো সংস্করণের ১:৫৬)। হযরত ‘আবদ্ আল-রাযযাক (রহ:)-এর রেওয়ায়াতের বিশ্বাসযোগ্যতার ব্যাপারে কোনো সন্দেহ-ই নেই। ইমাম বুখারী (রহ:) তাঁর কাছ থেকে ১২০টি এবং ইমাম মুসলিম (রহ:) ৪০০টি বর্ণনা গ্রহণ করেছেন।
👏তাই “হাদিসটি জাল” কথাটি ভুল প্রমাণীত হল।
Note : জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা:) থেকে বর্নিত সনদটি ইমাম আব্দুর রাজ্জাক ওনার (জান্নাতুল খুলদ) নামক কিতাবে বর্ননা করেছেন।
💜হাদিসের ২য় সুত্র💜
উক্ত হাদিস খানা শাব্দিক পরিবর্তন সহ “উমর ইবনুল খাত্তাব (রা:) থেকেও বর্নিত আছ।আব্দুল মালেক যিয়াদাতুল্লাহ (রহ:) ওনার (ফাওয়াইদ) কিতাবে বর্ননা করেছেন।
হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্নিত, ওহে ওমর ! তুমি জান কি আঁমি কে?
আঁমিই সেই সত্ত্বা যার নুরকে আল্লাহ তায়ালা সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর সেই নুর আল্লাহকে সিজদা করল,সে তাঁর সিজদার মধ্যে ৭০০ বছর ছিলেন। অতঃপর প্রত্যেক প্রথম বস্তু আঁমার নুরকে সিজদা করেছে এতে আঁমার কোন অহংকার নেই।
ওহে ওমর ! তুমি জান কি আঁমি কে?
আঁমিই সেই সত্ত্বা যাঁর নুর হতে আরশ,যার নুর হতে কুরসী,যার নুর হতে লাওহ ক্বলম,যার নুর হতে চন্দ্র-সুর্য,যার নুর হতে চোখের জ্যোতি,যার নুর হতে সৃষ্টির মাথার মধ্যে বিবেক-বুদ্ধি (আকল), যার নুর হতে মুমিনের ক্বলবের (অন্তরদৃষ্টি /কাশফের ক্ষমতা বা) খোদার পরিচয় (অনুভব) করার নুর সৃষ্টি। এতে আঁমার কোন অহংকার নেই।
[আব্দুল মালিক ইবনে যিয়াদাতুল্লাহ : ফাওয়ায়িদ কিতাবে।]
🌹হাদিসের ৩য় সুত্র🌹
ইমাম জাফর সাদেক (রহ:)
↓
ইমাম বাকের (রা:) থেকে
↓
তিনি [ইমাম বাকের (রা:)] ইমাম জয়নুল আবেদীন (রা:) থেকে
↓
তিনি ইমাম হোসাইন (রাঃ) থেকে
↓
তিনি ওঁনার পিতা হযরত আলী (রা:) থেকে বর্ননা করেন,
আল্লাহ নুরে মুহাম্মাদী (সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম) কে ঐ সময় সৃষ্টি করেন যখন না জমীন ছিল না আসমান, না আরশ, না কুরসী, না লাওহ, না ক্বলম, না জান্নাত, না জাহান্নাম ঐ সময় আম্বিয়া (আ:) গনের মধ্যে কেউই সৃষ্টি হন নি,তখন সর্বপ্রথম নুরে মুহাম্মাদী(ﷺ) কে সৃষ্টি করেন।
✌আল্লামা খারকূশী (রহ:) : শরফুল মুস্তফা কিতাব : ১ম খন্ড : ৭০৩ পৃষ্ঠায় : হযরত আলী (রা:) হতে এই হাদিসটি → নুর সম্পর্কিত হাদিসে জাবির (রা:) এঁর বর্ননাকে আরও শক্তিশালী করে।
🌹এই হাদীস শরীফটিকে আরও যে সমস্ত কিতাবে সহীহ হাদীস হিসেবে মন্তব্য করে দলীল হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে:
*১. দালায়েলুন নবুওয়াত ১৩/৬৩
*২.মাওয়াহেবুল্লাদুন্নিয়া ১/৯
*৩. মাদারেজুন নবুওয়াত ২/২
*৪. যুরকানী ১/৪৬
*৫. রুহুল মায়ানী ১৭/১০৫
*৬. সিরাতে হলবীয়া ১/৩০
*৭. মাতালেউল মাসাররাত ২৬৫ পৃ:
*৮. ফতোয়ায়ে হাদীসিয়া ১৮৯ পৃ:
*৯. আন-নিআমাতুল কুবরা ২ পৃ:
*১০. হাদ্বীকায়ে নদীয়া ২/৩৭৫
*১১. দাইলামী শরীফ ২/১৯১
*১২. মাকতুবাত শরীফ ৩ খন্ড ১০০ নং
*১৩. মওজুয়াতুল কবীর ৮৩ পৃ:
*১৪. ইনছানুল উয়ুন ১/২৯
*১৫. নূরে মুহম্মদী ৪৭ পৃ:
*১৬. আল আনোয়ার ফি মাওলিদিন নবী ৫ পৃ:
*১৭. আফদ্বালুল ক্বোরা
*১৮. তারীখুল খমীস ১/২০
*১৯. নুজহাতুল মাজালিস ১ খন্ড
*২০. দুররুল মুনাজ্জাম ৩২ পৃ:
*২১. কাশফুল খফা ১/৩১১
*২২. তারিখ আননূর ১/৮
*২৩. আনোয়ারে মুহম্মদীয়া ১/৭৮
*২৪. আল মাওয়ারিদে রাবী ফী মাওলীদিন নবী ৪০ পৃষ্ঠা।
*২৫. তাওয়ারীখে মুহম্মদ
*২৬. আনফাসে রহীমিয়া
*২৭. মা’ য়ারিফে মুহম্মদী
*২৮. মজমুয়ায়ে ফতোয়া ২/২৬০
*২৯. আপকা মাসায়েল আওর উনকা হাল ৩/৮৩
*৩০. শিহাবুছ ছাকিব ৫০
*৩১. মুনছিবে ইছমত ১৬ পৃ:
*৩২. রেসালায়ে নূর ২ পৃ:
*৩৩. হাদীয়াতুল মাহদী ৫৬পৃ:
*৩৪. দেওবন্দী আজিজুল হক অনুবাদ কৃত বুখারী শরীফ ৫/৩
🌹হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্নিত নূরের হাদিসখানা জাল নয়, সনদ সহীহ,রাবীগন নির্ভরযোগ্য এবং য়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস সংক্রান্ত হাদীস শরীফকে সহীহ বলে উল্লেখ করে বলেন –
ﺩﺭﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﻭﺍﺭﺩ ﺷﺪ ﻛﻪ ﺍﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻧﻮﺭﻱ
অর্থ: “সহীহ হাদিস শরীফে” বর্ যে, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আঁমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন!”
[মাদারেজুন নবুওয়াত ২য় খ
★৪. ইমামুল মুহাদ্দিসীন মোল্লা আলী ক্বারী র– ﻭﺍﻣﺎﻧﻮﺭﻩ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻓﻬﻮ ﻓﻲ
ﻏﺎﻳﺎﺓ ﻣﻦ ﺍﻟﻈﻬﻮﺭ ﺷﺮﻗﺎ ﻭ ﻏﺮﺑﺎ ﻭﺍﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ
ﺍﻟﻠﻪ ﻧﻮﺭﻩ ﻭﺳﻤﺎﻩ ﻓﻲ ﻛﺘﺎﺑﻪ ﻧﻮﺭﺍ
অর্থ: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলসালশ পেয়েছে।আর মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম উঁনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন। তাই নিঁজ কিতাব কালামুল্লাহ শরীফে উনার নাম মুবারক রাখেন ‘নূর’।”
[আল মওযুআতুল কবীর ৮৩ পৃষ্ঠা]
★৫. মোহাম্মদ ইবনে আল-হাজ্জ আল-আবদারী (ইন্তেকাল-৭৩৬ হিজরী) নিজ ‘আল-মাদখাল’ কেতাবে (দারুল কিতাব আল-আরবী বৈরুত সংস্করণের ২:৩৪) আল-খতিব আবু আল-রাবি’ মুহাম্মদ ইবনে আল-লায়েস প্রণীত ‘শেফা আস্ সুদূর’ গ্রন্থ হতে এর উদযা’তে আল-লায়েস বলেন, আল্লাহ সর্বপ্রথম যা সৃষ্টি করেন তা মহানবী (ﷺ) এঁর নূর; আর ওই নূর অস্তিত্ব করে বাকি সৃষ্টি জগতকে অস্তিত্ব দেন।
অতএব,আরশের নূর সৃষ্ট হয়েছে রাসূলে পাক (ﷺ)-এঁর নূর থেকে; কলমের নূরও তাঁর নূর থেকে; লওহের নূরও তাঁর নূর থেকে; দিনের আলো, জ্ঞানের আলো, সূর্য ও চাঁদের আলো, এবং দৃষ্টিশক্তি ও দূরদৃষ্টি সবই তাঁর নূর হতে সৃষ্টি করা হয়েছে।
★৬. বিখ্যাত মসাইয়্যিদিনা আব্দুল গনী নাবেলসী রহমাতুল্লাহি আলাইহি (বেসাল-১১৪৩ হিজরী)উক্ত হাদীস শরীফকে সরাসরি সহীহ বলে উল্লেখ করেছেন।তিনি বলেন –
ﻗﺪ ﺧﻠﻖ ﻛﻞ ﺷﻴﻲ ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻩ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻛﻤﺎ ﻭﺭﺩ ﺑﻪ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺍﻟﺼﺤﻴﺢ
অর্থ: নিশ্চয়ই প্রত্যেক জিনিস হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার নূর মুবারক থেকে সৃষ্টি হয়েছে, যেমনরয়েছে।”
[হাদীক্বায়ে নদীয়া-দ্বিতীয় অধ্যায়-৬০ তম অনুচ্ছেদ-২য় খন্ড ৩৭৫,মাকতাবা আল-নূরীয়্যা,ফয়সালাবাদ সংস্করণ]
★৭. ইমামুল মুফাসরিরীন, মুফতীয়ে বাগদাদ, হযরত আলূসী বাগদাদী (রহ:) উক্ত হাদিস শরীফকে নির্ভরযোগ্য বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি উনার কিতাবে লিখেন –
ﻭﻟﺬﺍ ﻛﺎﻥ ﻧﻮﺭﻩ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﺍﻭﻝ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﺎﺕ ﻓﻔﻲ ﺍﻟﺨﺒﺮ ﺍﻧﻮﺭ ﻧﺒﻴﻚ ﻳﺎﺟﺎﺑﺮ
অর্থ : সকল মাখলুকাতের মধ্যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলো,নূরে মুহম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া শরীফে বর্নিত আছে, হে জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু!আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আঁপনার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন।”
[তাফসীরে রুহুল মায়ানী ১৭ তম খন্ড, ১০৫ পৃষ্ঠা।]
✌ইমামুল মুফাচ্ছিরিন মাহমুদ আলুসী (রহঃ) নিজ ’তাফসী৮:৭১ অধ্যায়ে হযরত জাবের (রা:)-এর হাদীসটি আবারও উদ্ধৃত করেন।
ﻭﻛﻮﻧﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺭﺣﻤﺔ ﻟﻠﺠﻤﻴﻊ ﺑﺎﻋﺘﺒﺎﺭ ﺃﻧﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺼﻼﺓ ﻭﺍﻟﺴﻼﻡ ﻭﺍﺳﻄﺔ ﺍﻟﻔﻴﺾ ﺍﻹﻟﻬﻲ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻤﻜﻨﺎﺕ ﻋﻠﻰ ﺣﺴﺐ ﺍﻟﻘﻮﺍﺑﻞ، ﻭﻟﺬﺍ ﻛﺎﻥ ﻧﻮﺭﻩ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﺃﻭﻝ ﺍﻟﻤﺨﻠﻮﻗﺎﺕ، ﻓﻔﻲ ﺍﻟﺨﺒﺮ ” ﺃﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻧﻮﺭ ﻧﺒﻴﻚ ﻳﺎ ﺟﺎﺑﺮ ” ﻭﺟﺎﺀ ” ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﺍﻟﻤﻌﻄﻲ ﻭﺃﻧﺎ ﺍﻟﻘﺎﺳﻢ ”ﺃﺳﺮﺍﺭﻫﻢ ﻓﻲ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻔﺼﻞ ﻛﻼﻡ ﻓﻮﻕ ﺫﻟﻚ،
“সবার প্রতি কুল মাখলুকাতের নবী(ﷺ)-
-এঁর রহমত হওয়ার বিষয়টি সম্পৃক্ত রয়েছে এই বাস্তবতার সাথে যে,তিঁনি- ই সৃষ্টির শুরু থেকে সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্যে ঐশী করুণা ধারারসৃষ্টি করা হয়, যেমনিভাবে বর্ণিত হয়েছে হাদিসে, ‘‘ওহে জাবের, আল্লাহ সর্বপ্রথম তোমাদের নবী (ﷺ)-এঁর নূরকে স
✌আবার তাফসীরে ‘রুহুলমনিজ ‘আল-আনওয়ার ফী মওলিদ আন্ নবী মোহাম্মদ ‘আলাইহে আল-সালাত আল-সালাম’ কিতাবে (নাজাফ সংস্করণের ৫ পৃষ্ঠায়) হযরত আলী (ক:) থেকে নিম্নের হাদিসটি বর্ণনা করেন; নবী পাক (ﷺ) ইরশাদ ফরমান:আল্লাহ (অনন্তকালে) ছিলেন এবং তাঁর সাথে কেউ ছিল না; তিঁনি সর্বপ্রথম তাঁর মাহবুবের নূর সৃষ্টি করেন; এর ৪০০০ বছরের মধ্যে না সৃষ্টি করা হয়েছিল পানি, না আরশ, না কুরসী, না লওহ, না কলম, না বেহেশত, না দোযখ, না পর্দা, না মেঘমালা, না আদম, না হাওয়া।
🌹আবার সূরা যারিয়াতের ৫৬ নং আয়াতের তাফসীরে তিনি আরও ব্যাখ্যা বিশ্লেষন করেন। অনাদি-অনন্ত মহান সত্ত্বা আল্লাহ তায়ালা একাই ছিলেন, ছিলেন গুপ্ত। ইচ্ছা করলেন নিঁজেকে প্রকাশ করার, সে অনুযায়ী সৃষ্টি করলেন গোটা সৃষ্টি জগত।সৃষ্টির কেন্দ্র বানিয়েছেন যাঁকে, যাঁকে করেছেন সকল সৃষ্টি অস্তিত্বে আসার মাধ্যম যিনি তিঁনি হলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالأِنْسَ إِلاَّ لِيَعْبُدُونِ
‘আঁমি জ্বীন এবং মানবকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আঁমার ইবাদাতের জন্য।’
[সূরা যারিয়াত,আয়াত নং ৫৬]
👏এ আয়াতের তাফসীরে আল্লামা মাহমুদ আলুসী বাগদাদী একটি হাদিসে কুদসীর উদৃতি দিয়েছেন। আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন:
كنت كنزا مخفيا فأحببت أن أعرف فخلقت الخلق لاعرف
‘আঁমি ছিলাম সুপ্ত গুপ্ত ভান্ডার, পছন্দ করলাম পরিচিত হতে।অতএব পরিচয়ের জন্য সৃষ্টি করলাম এক সৃষ্টিকে।’
[আল্লামা আলুসী,রুহুল মা‘আনী: ২৭ পারা, ২
ﺍﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﺧﻠﻖ ﺟﻤﻴﻊ ﺍﻻﺷﻴﺎﺀ ﻣﻦ ﻧﻮﺭ ﻣﺤﻤﺪ ﺻﻠﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ ﻭﻟﻢ ﻳﻨﻘﺺ ﻣﻦ ﻧﻮﺭﻩ ﺳﻲﺀ
অর্থ: এ ব্যাপারে সকলেই একমত যে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ পাক সকল মাখলুকাত “নূরে মুহম্মদী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সৃষ্টি করেছেন। অথচ “নূরে মুহম্মদী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে কিঞ্চিত পরিমানও কমে নাই।”
[তাফসীরে রুহুল বয়ান ৭ম খন্ড ১৯৭-১৯৮ পৃষ্ঠা।]
★৯. ইমাম কুস্তালানী (রহ:) (আহম্মদ ইবনে মুহাম্মদ,ওফাত ৯২৩ হি:) বলেন,”এ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহ:) এর রেওয়াত যিনি নিজ সনদে হযরত জাবির (রা:) থেকে বর্ননা করেছেন ”
[আল-মাওয়াহিব আল-লাদুন্নিয়া,১ম খন্ড,৭১ পৃ:]
👏’আল মাওয়াহিব আল লাদুন্নিয়া (১:৫৫)গ্রন্থে লিপিবদ্ধ ইমাম কসতলানী (রহ:)-এর ভাষ্যানুযায়ী হযরত আব্দুর রাযযাক (রহঃ) (বেসাল-২১১ হিজরী) তাঁর রচিত ‘মুসান্নাফ’ কিতাবে ওপরের ঘটনাটি বর্ণনা করেন।শুধু তাই নয় তিনি তার কিতাবে দলিল হিসাবে তা বর্ননা করেন।
★১০. শাইখ আব্দুল কাদির জিলানী (রহ:) [পিরে পিরানী, মিরে মিরানী,গাউসে সামাদানী, মাহবুবে সুবহানী,গাউসুল আযম দস্তগীর (রহ:), ওফাত ৫৬১ হিজরি]
তিনি তার বিখ্যাত [Sirr al-asrar fi ma yahtaju ilayh al-abrar (p. 12-14 of the Lahore edition)] কিতাবে বলেন, আমি (রাসুল) আল্লাহর (নুর) থেকে সৃষ্টি আর আঁমার (নুর) থেকে সমস্ত বিশ্বাসীগন (ও সমস্ত কিছু) সৃষ্টি।তিনি আরো বলেন,রাসুল (ﷺ) এঁর নুর থেকে আল্লাহর আরশ সৃষ্টি এবং এমন আরো কিছু (যা হাদিসে প্রথম) সৃষ্টি যেমন কলম, বুদ্ধিমত্তা।
[The Secret of Secrets (Cambridge: Islamic Texts Society, 1994)]
★১১. হযরত নিযামউদ্দীন ইবনে হাসান নিশাপুরী (বেসাল-৭২৮ হিজরী) দলিলস্বরুপ (evidence হিসেবে) গ্রহন করেছেন, স্বরচিত ‘গারাইব আল-কুরআন’ শীর্ষক তাফসীরগ্রন্থে (কায়রোর বাবা সংস্করণের ৮:৬৬) [সুরা জুমার (৩৯.১২) ‘ আমাকে আরো নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন আমি প্রথম মুসলিম হই।’] এই আয়াতের তফসীরে
★১২. ইমাম আজলুনী (রহ) বলেন,”এ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহ:) এর রেওয়াত যিনি নিজ সনদে তা বর্ননা করেছেন
★১৩. ইমাম আবদুল করীম জিলি(জন্ম ৭৬৬ হি.) নিজ ‘নামুস আল-আ’যম ওয়া আল-কামুস আল-আকদাম ফী মা’রেফত কদর আল-বানী সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম’ গ্রন্থে দলিলস্বরুপ (evidence হিসেবে) বর্ননা করেছেন। ইমাম নাবহানী (রহ:)-ও এটি বর্ণনা করেন তাঁর ‘জওয়াহির আল-বিহার’ কেতাবে।
★১৪. ইমাম ইয়দারুসি (রহ:) বলেন,”এ ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহ) এর রেওয়াত যিনি স্বয়ং নি
✌তাছাড়াও ইমাম ইউসুফ ইবনে ইসমাঈল নাবহানী (রহ:) তাঁর প্রণীত ‘আল-আনওয়ার আল-মোহাম্মদিয়্যা (পৃষ্ঠা ১৩), ‘জওয়াহির আল-বিহার’ (বাবা কায়রো সংস্করণ, ১১২৫ বা ৪:২২০ পৃষ্ঠা) এবং ‘হুজ্জাত-আল্লাহ আলাল আলামীন’ (২৮ পৃষ্ঠা) তার বইগুলোতে একে দলিল স্বরুপ (evidence হিসেবে) বর্ননা করেন।
★১৬. শায়খ ইউসুফ আল-সাইয়্যেদ হাশিম আল-রেফাঈ’ তাঁর কৃত ‘আদিল্লাত আহল আস-সুন্নাহ ওয়াল জামা’আ আল-মুসাম্মা আল-রাদ্দ আল-মোহকাম আল-মানী’ শীর্ষক পুস্তকে (২২ পৃষ্ঠায়) বলেন এটা দলিল সরূপ এবং “ইমাম আবদুর রাযযাক এটি বর্ণনা করেছেন।”
★১৭. আহমদ আবেদীন শামী (বেসাল-১৩২০ হিজরী), যিনি হানাফী আলেম ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (রহ:)-এর ছেলে, তিনি ইমাম ইবনে হাজর হায়তামী মক্কী (রহ:)-এর কৃত ‘আন-নি’মাত আল-কুবরা ‘আলাল ’আলম ফী মওলিদে সাইয়্যেদে ওয়ালাদে আদম’ পুস্তকের ব্যাখ্যামূলক বইয়ে এই হাদীসটি দলিল হিসেবে পেশ করেন।
★১৮. আবদুল হাই লাখনৌভী (মৃত্যু: ১৩০৪ হিজরী), এই হাদীসটি স্বরচিত ‘আল-আসার আল-মারফু’আ ফী আল-আখবার আল মাওদু’আ (লাহোর সংস্করণ, ৩৩-৩৪ পৃষ্ঠা) শীর্ষক বইয়ে বর্ণনা করেন এবং বলেন, “আবদুর রাযযাকের এই রওয়ায়াত থেকে ’নূরে মোহাম্মদী’র আউয়ালিয়্যা তথা প্রাধান্য/অগ্রগণ্য হওয়ার বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠিত হয়,যেমনিভাবে এর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠিত হয় সকল সৃষ্টির ওপরে এঁর অগ্রাধিকার।”
★১৯. ভারত উপমহাদেশের ওহাবী-প্রভাবিত দেওবন্দী মতবাদের গুরুদের অন্যতম শাহ মোহাম্মদ ইসমাঈল দেহেলভী নিজ ‘এক রওযাহ’ শীর্ষক চটি পুস্তিকায় (মালটা সংস্করণের ১১ পৃষ্ঠা) লিখেছে:বর্ণনার ইশারা অনুযায়ী, ‘আল্লাহ সর্বপ্রথম সৃষ্টি করেন আমার (হুযূরের) নূর’।
★২০. ভারত উপমহাদেশের দেওবন্দী ওহাবী গুরুদের অন্যতম রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী তার কৃত ‘ফতোওয়ায়ে রশীদিয়্যা’ পুস্তকে (করাচী সংস্করণের ১৫৭ পৃষ্ঠায়) লিখেছে যে এই হাদীস “নির্ভরযোগ্য সংকলনগুলোতে পাওয়া যায় নি, তবে শায়খ আবদুল হক্ক দেহেলভী এর কিছু প্রামাণ্য ভিত্তি থাকায় একে উদ্ধৃত করেছেন।” আসলে শায়খ আবদুল হক্ক দেহেলেভী (রহ:) শুধু এর উদ্ধৃতি-ই দেন নি, তিনি আরও বলেছেন যে এই হাদীস সহীহ (নির্ভুল)।
★২১. ইশান ইলাহি জহির (ওহাবী নেতা) , তার কিতাব [Hadiyyat al-mahdi (p. 56 of the Sialkut edition)] এ বলেছেন, আল্লাহ তার সৃষ্টির সুচনা করেছিলেন নুরে মুহাম্মাদী সা. (al-nur al-muhammadi) দ্বারা তারপর তিনি পানির উপর আরশ সৃষ্টি করেন। মুহাম্মাদ (ﷺ) এর নুর সমস্ত সৃষ্টির প্রাথমিক উপাদান যার থেকে হাদিসে (এটাও) এসেছে যে প্রথম সৃষ্ট বস্তু হল কলম।
★২২. ভারত উপমহাদেশের দেওবন্দী ওহাবীদের নেতা আশরাফ আলী থানভী স্বরচিত ‘নশরুত্ তৈয়ব’ (উর্দুতে লাহোর সংস্করণের ৬ এবং ২১৫ পৃষ্ঠা) পুস্তকে এই হাদীস আবদুর রাযযাকের সূত্রে বর্ণনা করে এবং এটাকে নির্ভরযোগ্য বলে।
★২৩. ভারত উপমহাদেশের দেওবন্দী ওহাবীদের নেতা এহসান এলাহী যাহির, যাকে লাহোরের সুন্নীভিত্তিক বেরেলভী সিলসিলা শত্রু হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, সে তার ‘হাদিয়্যাত আলমাহদী’
(শিয়ালকোট সংস্করণের ৫৬ পৃষ্ঠা) বইয়ে বলে:আল্লাহ তাঁর সৃষ্টি আরম্ভ করেন ’আল-নূর আল-মোহাম্মদিয়া’ তথা মহানবী(ﷺ)-এঁর নূর দ্বারা; অতঃপর তিনি আরশ সৃষ্টি করেন পানির ওপর; এরপর বাতাস এবং একে একে ’নূন’, ’কলম’, লওহ এবং মস্তিষ্ক সৃষ্টি করেন। অতএব, মহানবী (ﷺ)-এঁর নূর আসমান ও জমিনে যা কিছু বিরাজমান তা সৃষ্টিতে মৌলিক উপাদান বলে সাব্যস্ত হয়…..আর হাদীসে আমাদের কাছে যা বিবৃত হয়েছে, তাতে (বোঝা যায়) আল্লাহতা’লা প্রথমে কলম সৃষ্টি করেন; আরও প্রথমে সৃষ্টি করেন মস্তিষ্ক; এর দ্বারা যা বোঝানো হয়েছে তা হলো আপেক্ষিক বা তুলনামূলক শ্রেষ্ঠত্ব।
🌹হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্নিত নূরের হাদিসখানা জাল নয়, সনদ সহীহ,রাবীগন নির্ভরযোগ্য এবং মুসান্নাফ কিতাবে এই হাদিস আছে এবং ছিল তার প্রমান :(৩য় পর্ব দেখুন)
🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹🌹
★২৪. ইমাম সুয়ুতী (রহ:) এর শত শত ফতোয়া যেখানে ওহাবীরা ছেড়ে দেয় সেখানে ওনার ১টা উক্তিকে নিয়ে ওহাবীরা আদা-জল খেয়ে লেগেছে :
♠ইযলুনি (১২ শতাব্দীতে) তার ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহ:) “[Kashf ul Khafa” vol 1 p 311], and in [“Arba’in” n°19], এবং তিনি শেষে ১টা বইয়ে বলেন যে তিনি এর “”ইসনদ”” পাননি এবং তিনি একে ইমাম কুস্তালানী (রহ:) এর (সমর্থন অনুযায়ী) অনুসরন করেছেন।
♠ইমাম সুয়ুতী (রহ:) তাখরিজ হাদিস (শরহে মাওয়াকিফ) এ বলেন, আমি এই শব্দটুকু খুজে পাইনি।
♠আল-ঘুমারি (ওহাবী নেতা) বলেন, ইমাম সুয়ুতী (রহ:) তার “খাসাইস” কিতাবে এই হাদিসটি তারপরও ইমাম আব্দুর রাজ্জাক (রহ:) এর থেকে বর্ননা বলে (সমর্থন দিয়ে) লিখেছেন।
✌উল্লেখ্য যে,“আল্লামা সুয়ুতী (রহ:) এর [জন্ম ৮৪৯ হিজরী আর ওফাত ৯১১ হিজরী] অপর দিকে আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে আহমদ কুস্তালানি (রহঃ) এর [জন্ম ৮৫১ হিজরী আর ওফাত ৯২৩ হিজরী] মাত্র ২ বছরের ব্যবধানে ইমাম কুস্তালানী (রহ:) সম্পর্কে ওহাবীরা বলে ইমাম সুয়ুতী নাকি ইমাম কুস্তালানীর অনেক আগের তাই সুয়ুতী (রহ:) না করেছেন তাকেই মানব।তাহলে এর জবাবে বলতে হয়:
👏👏👏👏👏👏👏👏👏
*(ক.) ইমাম কুস্তালানী (রহ:), ইমাম সুয়ুতীর ২ বছরের ছোট। তিনি ইমাম সুয়ুতীর যামানার জগতবিখ্যাত মুহাদ্দিস।কোন দিক থেকে ইমাম সুয়ুতী (রহ:) যেমন কম না,তেমনি ইমাম কুস্তালানী (রহ:)ও কম না। তিনি স্বয়ং একে আব্দুর রাজ্জাক (রহ:) এর বর্ননা বলে দলিল হিসেবে গ্রহন করেছেন আর ইমাম সুয়ুতী একে খুঁজে পান নি বলেছেন তাই এখানে অন্য কোন খুরা অজুহাত দেখানোর সুযোগ নেই।
👌👌👌👌👌👌👌👌👌👌👌
*(খ.) তাদের কথামত যদি সব কথা বাদও দেই তাহলে বলুন যদি এই হাদিস নাই থাকত তাহলে ইমাম বায়হাকী (রহ:)
Born : 384 AH/994 CE
Died: 458 AH/1066 CE
বর্তমানে [১৪৩৬ হিজরি] তাহলে এই জগতবিখ্যাত মুহাদ্দিস আজ থেকে প্রায় ১০০০ বছর আগে এই হাদিসকে দলিলস্বরুপ তার “”দালাইলুন-নবুওয়াত”” কিতাবে আব্দুর রাজ্জাক (রহ:) এর সনদ হিসেবে কিভাবে লিখে গেলেন? যার “সুনানে বায়হাকী” সহিহ হাদিসের কিতাবগুলোর মধ্যে অন্যতম।
👌👌👌👌👌👌👌👌👌👌
*(গ.) ইমাম সুয়ুতী(রহ:) খুঁজে পাননি এর মানে এই নয় যে, তিনার রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এঁর নুরের প্রতি তার আকিদা ছিল না। তিনি নিজে সেই হাদিসকে খুঁজে না পাওয়ার পরও তার বিখ্যাত “”খাসাইসুল কুবরা”” কিতাবে আব্দুর রাজ্জাক (রহ:) এর বর্ননা বলে ধরে নিয়েছেন।
🌹এবার ইমাম সূয়তী(রহ:) এর কিতাব থেকে নূরের কিছু দলিল দেখুন:
**১. আল্লামা জালালুদ্দীন সূয়ুতী (রহ:) বলেন:
من الله نور- هو النبي صلي الله عليه و سلم وكتاب قران مبين
অর্থ: এ আয়াত শরীফে “নূর” অর্থ হলো- হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম,আর কিতাব অর্থ কুরআন শরীফ।”
[তাফসীরে জালালাইন, ৯৭ পৃষ্ঠা]
**২. সুরা সাফ্ফ ৮নং আয়াতে নূরের তাফসীর দেখুন: তাফসীরে জালালাঈন শরীফ, ৪৫৯পৃঃ
**৩.হাফিজুল হাদীস ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী(রহঃ)বর্ণনা করেন:
اخرج الحكيم الترمذى عن ذكوان ان رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرى له ظل فى شمس ولاقمر قال ابن سبع: من خصائصه ان ظله كان لا يقع على الارض وانه كان نورا فكان اذا مشى فى الشمس او القمر لا ينظر له ظل- قال بعضهم: ويشهد له حديث قوله صلى الله عليه فى دعائه- واجعلى نورا-
‘হাকিম তিরমিযী হযরত যাকওয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হতে বর্ণনা করেছেন, নিশ্চয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর ছায়া না সূর্যের আলোতে দেখা যেত, আর না চন্দ্রের আলোতে।ইবনু সাবা‘ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন- রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এঁর বৈশিষ্ট্য এ যে, নিশ্চয় তাঁর ছায়া জমিনে পতিত হতো না, কেননা তিঁনি ছিলেন নূর। অতএব,তিঁনি যখন সূর্যের আলোতে অথবা চন্দ্রের আলোতে চলতেন,তখন তাঁর ছায়া দেখা যেত না।
কেউ কেউ বলেন,রাসূল পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামার ছায়া না থাকার বিষয়টি ঐ হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত, যা হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর দু‘আয় বলেছেন- হে আল্লাহ! আঁমাকে নূর করে দাও।’
[ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী, আল-খাসায়েসুল কুবরা: ১/১১৬]
**৪. মা আমিনা বলেন,”আঁমি নক্ষত্রের দিকে দৃস্টিপাত করলাম মনে হচ্ছিল যে,এগুলো যেন আঁমার উপর পতীত হবে।অতপর আঁমি যখন প্রসব করলাম এঁর থেকে একটি নূর বের হল(আঁমার গর্ভ হতে একটি নূর বের হল)।সে নূরের আলোতে ঘর বাড়ী উদ্ভাসিত হয়ে গেল এমনকি নূর ছাড়া কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না।
[খাসায়েসুল কুবরা(প্রাগুক্ত),১ম খণ্ড, ১১৩পৃঃ,নূর তত্ব ৬৮ পৃঃ]
**৫. নবীজী (ﷺ) নিঁজে ইরশাদ করেন-
وإن أمي رأuiت في بطنها نوراً قالت : فجعلت أتبع بصري النور فجعل النور يسبق بصري حتى أضاء لي مشارق الأرض ومغاربها
‘আঁমার আম্মাজান দেখলেন যে তাঁর পেটে নূর অবস্থান করছে। তিঁনি বলেন, অতঃপর নূরের দিকে আঁমি চক্ষু ফিরালাম, নূরের প্রখরতা আঁমার চোখের দৃষ্টিকে ম্লান করে দিচ্ছিল। এমনকি ঐ নূরের আলোতে পৃথিবীর পূর্ব-পশ্চিম তথা সারা দুনিয়া আঁমার নিকট আলোকিত ও প্রকাশিত হয়ে গেল।’
[ইমাম যায়‘আলী, তাখরীজুল আহাদীসি ওয়াল আছার: ৮৩; ইমাম সুয়ূতী, আল-খাসায়েসুল কুবরা]
**৬.ইমাম ছালাভী (রহ:) [ওফাত ৪২৭] তার “তাফসীরে ছালাভীতে ” হাদিসটির সনদসহ বর্ননা করেছেন:
আমাকে অর্থাৎ ইমাম ছালাভী (রহ:) কে সংবাদ দিয়েছেন
||
আবু উসমান (রহ:)
||
তিনি তাবেয়ী হযরত সাবিত (রহ:) হতে,
||
তিনি হযরত আনাস (রা:) হতে বলেন,
||
আর তিনি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) হতে যে,
রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা আঁমাকে তাঁর নুর থেকে সৃষ্টি করেছেন, আবু বকর (রা:) কে আঁমার নুর থেকে সৃষ্টি করেছেন, উমর (রা:) ও আয়েশা (রা:) কে আবু বকরের নুর থেকে সৃষ্টি করেছেন।সমস্ত মুমিনদেরকে উমরের নুর থেকে আর সমস্ত মু’মিন নারীগনকে হযরত আয়েশা (রা:) এঁর নুর থেকে সৃষ্টি করেছেন।
********দলিল*******
*(ক.) ইমাম ছালাভী : তাফসীরে ছালাভী : ৭/১১১ পৃ: সুরা নুর : আয়াত নং ৩৯
*(খ) ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী : আল-লাআতিল মাসনু : ১/১৫০ পৃ: ও ১/৩২০ পৃ:
**৭.অপরদিকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন—
ﻣَﺎﻣِﻦْ ﻣَﻮْﻟُﻮْﺩٍ ﺍِﻟَّﺎ ﻭَﻓِﯽْ ﺳُﺮَّﺗِﻪ ﻣِﻦﺗﺮﺑﺘﻪ ﺍﻟﺘﯽ ﺧﻠﻖ
ﻣﻨﻬﺎﺣﺘﯽ ﻳﺪﻓﻦ ﻓﻴﻬﺎ ﻭﺍﻧﺎ ﻭﺍﺑﻮﺑﮑﺮ ﻭﻋﻤﺮ ﺧﻠﻘﻨﺎ ﻣﻦ
ﺗﺮﺑﺔ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﻭﻓﻴﻬﺎ ﻧﺪﻓﻦ۔ ﺭﻭﺍﮦ ﺍﻟﺨﻄﯿﺐ ﺍﻟﺒﻐﺪﺍﺩﯼؒ ﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩؓ ﻓﯽ ﮐﺘﺎﺏ ﺍﻟﻤُﺘّﻔَﻖ ﻭَﺍﻟْﻤُﻔْﺘَﺮﻕ .
অনুবাদ: হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে রাসূল (ﷺ) বলেছেন, প্রত্যেক নবজাতক শিশুর নাভীতে ঐ মাটির কিছু অংশ নিহিত থাকে যা থেকে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে, এমনকি সে মাটিতেই তাঁকে দাফন করা হবে। আঁমি (হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম),আবু বকর ও উমর একই মাটি হতে সৃষ্টি,আর তাতেই আঁমরা দাফন হবো।”
লক্ষ্য করুন: ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী (রহ:) [৮৪৯-৯১১ হি:] তিনি বলেন, হাদিসটি অত্যন্ত দুর্বল বা দ্বয়ীফ (যা খতিব আল বাগদাদীর মতের সাথে মিলে গরীবের পর্যায়ভুক্ত প্রায় কারন তিনি শুধু দুর্বল বলেন নি বরঞ্চ অত্যন্ত দুর্বল বলেছেন)।
**৮.হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) থেকে বর্নিত।
عن عمر بن الخطاب رضي الله عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم لما أذنب آدم صلى الله عليه وسلم الذنب الذي أذنه رفع رأسه إلى العرش فقال أسألك حق محمد ألا غفرت لي فأوحى الله إليه وما محمد ومن محمد فقال تبارك اسمك لما لما خلقتني رفعت رأسي إلى عرشك فإذا هو مكتوب لا إله إلا الله محمد رسول الله فعلمت أنه ليس أحد أعظم عندك قدرا ممن جعلت اسمه مع اسمك فأوحى الله عز وجل إليه يا آدم إنه آخر النبيين من ذريتك وإن أمته آخر الأمم من ذريتك ولولاه يا آدم ما خلقتك
রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেছেন,হযরত আদম (আঃ) থেকে যখন অপ্রত্যাশিত ভাবে ভুল সংঘটিত হয়, [যার দরূন তাঁকে জান্নাত থেকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়, তখন তিঁনি সর্বদা কাঁদতে ছিলেন। আর দুই ও ইস্তেগফার পড়তে ছিলেন।]
তখন তিঁনি আল্লাহর দরবারে আরজ করলেন,হে আল্লাহ! মুহাম্মদ (দরুদ) এঁর ওসীলায় আঁমি তোঁমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি। তখন ওহী নাজীল হয়- মুহাম্মদ (ﷺ)কে (তুমি কিভাবে জানলে তুমি তো তাঁকে কখনো দেখ নি)?
তখন তিনি বলেন-যখন আঁপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন,আমার অভ্যন্তরে রুহ প্রবেশের পর মাথা তুলে আমি আরশে লেখা দেখলাম- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ।তখনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে,মুহাম্মদ (ﷺ) এঁর চেয়ে সর্বাধিক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আর কেউ নেই ।যাঁর নাম আঁপনি স্বীয় নামের সাথে রেখেছেন।তখন ওহী নাজীল হল-তিঁনি সর্বশেষ নবী।তোমার সন্তানদের অন্তর্ভূক্ত হবে।যদি তিনি না হতেন, তাহলে তোমাকেও সৃষ্টি করা হতো না।”
[খাসায়েসুল কুবরা:১/১২;হা:১২]
🌹ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ুতী বলেন, বিভিন্ন সনদে বর্ণিত এ হাদিসটি বিশুদ্ধ।
[আল খাসায়েসুল কুবরাঃ১/৮]
**৯. হাদিস শরীফে বর্নিত হয়েছে:
عن حضرت ابي هريرت رضي الله عنه قال قال رسول صلي الله عليه
و سلم كنت اول النبين في الخلق واخرهم في البعث
অর্থ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু উনার থেকে বর্নিত, হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, সৃষ্ট জীবের মধ্যে আঁমি সর্বপ্রথম নবী হিসাবে সৃষ্টি হয়েছি। কিন্তু আমি প্রেরিত হয়েছি ( যমীনে প্রকাশ পেয়েছি) সব নবী আলাইহিমুস সালাম উঁনাদের শেষে।”
[ইমাম সুয়ূতী,খাছায়েছুল কুবরা: ১/৫ ]
**১০.হযরত ইবনু আব্বাস ও আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম হতে বর্ণিত রয়েছে, তাঁরা বলেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ! আঁপনার জন্য নবুয়্যত কখন অবধারিত হয়েছে? জবাবে নবীজী (ﷺ) ইরশাদ করেন-
كنت نبيا وادم بين الروح والجسد
‘আঁমি তখন নবী ছিলাম যখন আদম আলাইহিস সালাম দেহ ও রূহের মধ্যে ছিলেন।’
[ইমাম সুয়ূতী, খাছায়েছুল কুবরা: ১/৩]
🌹লক্ষ্যনীয়: ইমাম সূয়ুতী(রহ:) এর একটি উক্তি দিয়ে যারা দলিল দেখান,তারা উপরোল্লোখিত ১০টি দলিলের বিপক্ষে এখন কি বলবেন!!
✌আব্দুল্লাহ গুমারী নিজ ‘এরশাদ আত্ তালেব আল্ নাজিব ইলা মা ফী আল-মাওলিদ আন্ নাবাউয়ী মিন আল-আকাযিব’ (দারুল ফুরকান সংস্করণের ৯-১২ পৃষ্ঠা) পুস্তকে ইমাম সৈয়ুতী (রহ:)-এর বক্তব্যের ওপর মন্তব্য করেন যে উপরোক্ত হাদীসের কোনো নির্ভরযোগ্য সনদ নেই; তিনি বলেন, “এতে ইমাম সৈয়ুতীর পক্ষ থেকে চরম শিথিলতা দৃশ্যমান হয়, যা থেকে তাঁকে আমি ঊর্ধ্বে ভাবতাম। প্রথমতঃ এই হাদীস আবদুর রাযযাকের ‘মুসান্নাফ’ কিতাবে উপস্থিত নেই, অন্যান্য হাদীসের বইপত্রেও নেই। দ্বিতীয়তঃ এই হাদীসের কোনো এসনাদ (বর্ণনাকারীদের পরম্পরা) নেই। তৃতীয়তঃ তিনি হাদীসের বাকি অংশ উল্লেখ করেন নি। দিয়ারবকরীর ‘তারিখ’ গ্রন্থে এ কথা বলা হয়েছে এবং যে কেউ হাদীসটি পড়লেই নিশ্চিত হবেন যে এটি মহানবী (ﷺ) সম্পর্কে একটি মিথ্যা।” আল-গোমারীর এই অতিরন্ঞ্জিত সিদ্ধান্ত যে নাকচ; তা এই বাস্তবতা দ্বারা প্রতিভাত হয় যে, দিয়ারবকরী নিজেই এটিকে মিথ্যা হিসেবে বিবেচনা করেন নি যখন তিনি তাঁর বইয়ের প্রারম্ভে হাদীসটি উদ্ধৃত করেন।
✌হযরত ইবনে হাজার হায়তামি (রহ:) [ওফাত-৯৭৪ হিজরি] তার “ফতোয়ায়ে হাদিসিয়া “গ্রন্থে ২৪৭ পৃষ্ঠায় বলেন ইমাম আব্দুর রাজ্জাক অত্র হাদিস খানা তার মুসনদে বর্ণনা করেছেন।বিখ্যাত মুহাদ্দিস, আল্লামা আবুল হাসান বিন আব্দিল্লাহ আল বিকরী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন :
ﻗﺎﻝ ﻋﻠﻲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻻ ﺷﻲﺀ ﻣﻌﻪ ﻓﺎﻭﻝ ﻣﺎ ﺧﻠﻖ ﻧﻮﺭ ﺣﺒﻴﺒﻪ ﻗﺒﻞ ﺍﻥ ﻳﺨﻠﻖ ﺍﻟﻤﺎﺀ ﻭﺍﻟﻌﺮﺵ ﻭﺍﻟﻜﺮﺳﻲ ﻭﺍﻟﻠﻮﺡ ﻭﺍﻟ ﻭﺍﻟﺠﻨﺔ ﻭﺍﻧﺎﺭ ﻭﺍﻟﺤﺠﺎﺏ
অর্থ: হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ওয়া আলাইহিস সালাম বলেন, শুধুমাত্র আল্লাহ পাক ছিলেন, তখন অন্য কোন অস্তিত্ব ছিলো না। অতঃপর তিনি পানি, আরশ, কুরসী,লওহো,ক্বলম, জান্নাত, জাহান্নাম ও পর্দা সমূহ ইত্যাদি সৃষ্টি করার পূর্বে উনার হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন।”
[আল আনওয়ার ফী মাওলিদিন নাবিয়্যিল মুহম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫ম পৃষ্ঠা।]
🌹হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্নিত নূরের হাদিসখানা জাল নয়, সনদ সহীহ,রাবীগন নির্ভরযোগ্য এবং মুসান্নাফ কিতাবে এই হাদিস আছে এবং ছিল তার প্রমান :(৪র্থ পর্ব দেখুন)
★২৫. মোল্লা আলী ইবনে সুলতান আল-কারী (ইনতেকাল-১০১৪ হিজরী) নিজ ‘আল-মাওলিদ আল-রাওয়ী ফী আল-মাওলিদ আল-নববী’ (পৃষ্ঠা ৪০) পুস্তকে পুরো হাদীসটি বর্ণনা করেন; এ বইটি শায়খ সাইয়্যেদ মোহাম্মদ আলাউয়ী আল-মালেকী সম্পাদনা করেছেন।
★২৬. মোল্লা আলি কারী (রহ:) [ওফাত ১০১৪ হিজরি] তিনি বলেন-
ومنه قوله اول ما خلق اللّه نورى وفى رواية روحى ومعناهما واحد فان الارواح نورانية اى اول ما خلق اللّه من الارواح روحى
প্রথম বস্তু যা আল্লাহ পাক সৃষ্টি করেছেন তা হল আঁমার নুর এবং অন্য বর্ননায় এসেছে যে “রুহ” এবং এই দুইটার অর্থ একই কারন “রুহ” হল নুরানী। এই হাদিসের অর্থ এটাও যে আল্লাহ সমস্ত “রুহের” সৃষ্টির পুর্বে আঁমার “রুহ” পাক সৃষ্টি করেছিলেন।
[Mirqaat al-Mafateeh]
✌তাছাড়াও মোল্লা আলী কারী রহমাতুল্লাহি আলাইহি [বিখ্যাত মুহাদ্দিস, ছহীবে মেরকাত, ইমামুল মুহাদ্দিসীন] উক্ত হাদীস শরীফের সমর্থনে এর গ্রহনযোগ্যতা সম্পর্কে বলেন –
وامانوره صلي الله عليه و سلم فهو في غاياة من الظهور شرقا و غربا واول ما خلق الله نوره وسماه في كتابه نورا
অর্থ: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উঁনার নূর মুবারক পূর্ব ও পশ্চিমে পূর্নরুপে প্রকাশ পেয়েছে। আর মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম উঁনার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন।তাই নিঁজ কিতাব কালামুল্লাহ শরীফে উঁনার নাম মুবারক রাখেন ‘নূর’।”
[আল মওযুআতুল কবীর ৮৩ পৃষ্ঠা]
★২৭. আলি ইবনে বুরহান উদ্দিন হালাবী [ওফাত, ১০৪৪ হিজরি] তিনি বিখ্যাত [As- Sirah Al-Halabi (1:31 of the Maktaba Islamiyya edition in Beirut)] কিতাবে দলিল হিসেবে বর্ননা করে বলেন,এই হাদিসটি এটাই প্রমান করে যে সমস্ত সৃষ্টির মুল হল রাসুলুল্লাহ (ﷺ)কে সৃষ্টি এবং আল্লাহ ভাল জানেন।”
★২৮. মোহাম্মদ ইবনে আহমদ ফাসী (ইন্তেকাল-১০৫২ হিজরী) তাঁর ‘মাতালি আল-মাসাররাত’ পুস্তকে (মাতবা’আ আল-তাযিয়্যা সংস্করণের ২১০, ২২১ পৃষ্ঠায়) এই হাদীস দলিল হিসেরে উদ্ধৃত করেন এবং বলেন: “এই বর্ণনাগুলো সকল সৃষ্টির ওপরে হুযূর পাক (ﷺ)-এঁর শ্রেষ্ঠত্ব (আওয়ালিয়্যা) ও অগ্রাধিকার সাব্যস্ত করে, আর এও প্রতিভাত করে যে তিনি তাদের কারণ (সাবাব)।
✌তাছাড়াও ইমাম মুহম্মদ আহমদ ইবনে আহমদ ফার্সী রহমাতুল্লাহি আলাইহি উক্ত হাদীস শরীফকে “”সহীহ “” বলে নিজের কিতাব মুবারকে উল্লেখ করেছেন। তিনি বর্ননা করেন –
اول ما خلق الله نوره ومن نوري خلق كل شءي
অর্থ : মহান আল্লাহ পাক সর্বপ্রথম আঁমার নূর মুবারক সৃষ্টি করেন এবং আঁমার নূর মুবারক থেকে সবকিছু সৃষ্টি করেন।”
[মাতালেউল মাসাররাত ২৬৫ পৃষ্ঠা]
★২৯. আশরাফ আলী থানবী নিজেই উক্ত হাদীস শরীফকে তার কিতাব “নশরুত তীব” উল্লেখ করেছেন। তিনি সেখানে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন, তার নাম দিয়েছেন ” নূরে মুহম্মদীর বিবরন”।তাছাড়াও প্রথমে তিনি যা লিখেছেন তা হলো: “আব্দুর রাজ্জাক তাঁর সনদসহ হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ননা করেছেন যে,আমি আরজ করলাম : ইয়া রসূল্লাল্লাহ আমার পিতা মাতা আঁপনার জন্য কোরবান হউক, আমাকে এই খবর দিন যে,আল্লাহ পাক সর্ব প্রথম কোন বস্তুটি সৃষ্টি করেছেন?
👏জবাবে আশরাফ আলী থানবী তার কিতাবে লিখেছেন
يا جابر ان الله تعالي قد خلق قبل الاشياء نور نبيك
অর্থ: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ মুবারক করেন,হে জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ! নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে আঁপনার নবীর নূর মুবারক সৃষ্টি করছেন।”
[ নশরুততীব ৫ পৃষ্ঠা]
✌এবার আসুন।একটু গভীর থেকে দেখা যাক; রাসুল (ﷺ)-এঁর সৃষ্টি বিষয়ে মাওলানা আশরাফ আলী থানবী’র দৃষ্টিভঙ্গি কি রকম??
দেওবন্দের ওলামাগণ অর্থাৎ ওহাবীরা যাকে হাকিমুল উম্মত উপাধিতে ভূষিত করে থাকেন তিনি হলেন মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (মৃতঃ১৩৬২ হি.)।মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব এর অন্যতম সিরাত গ্রন্থ “ নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিব” এর ২৫ পৃষ্টায় রাসূল (ﷺ) নূরের সৃষ্টি মর্মে একটি অধ্যায় রচনা করেছেন।এই কিতাবটি বাংলা অনুবাদও করেছে বেহায়া ওহাবীরা,নাম দিয়েছে “যে ফুলের খুশবুতে সারা জাহান মাতোয়ারা” অনুবাদ করেছেন সাবেক ইমাম ও খতিব লালবাগ শাহী মসজিদ,মাওলানা মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম।
✌যাক আশরাফ আলী থানবী অধ্যায়টির নাম দিয়েছেন, “নূরে মোহাম্মদী (ﷺ)-এঁর বর্ণনা”।👏
তারপর মাওলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেব হযরত জাবের (রা:) এর হাদিস এভাবে বর্ণনা শুরু করেন- “প্রথম বর্ণনাঃ জাবের رضي الله عنه হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি আরজ করলাম ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমার মাতা পিতা আঁপনার প্রতি উৎসর্গ।আমাকে বলুন,আল্লাহ তা’আলা সবকিছুর পূর্বে কি সৃষ্টি করেছেন? হুজুর (ﷺ) ফরমালেন, হে জাবের! নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা সবকিছুর পূর্বে তাঁর নূরের ফয়েজ হতে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।অতঃপর ঐ নূর খোদায়ী কুদরতে যেখানে আল্লাহর ইচ্ছা ভ্রমণ করতে থাকে।তখন লওহ,কলম,জান্নাত,জাহান্নাম,ফেরেশতা, আসমান,জমীন,সূর্য,চন্দ্র,দানব,মানব কিছুই ছিল না।
অতঃপর যখন আল্লাহপাক বিশ্বজগৎ সৃষ্টি করতে ইচ্ছা করলেন,তখন ঐ নূরকে চারভাগে বিভক্ত করেন।একভাগ দ্বারা কলম সৃষ্টি করলেন,দ্বিতীয় ভাগ দ্বারা লওহ,আর তৃতীয় ভাগ দ্বারা আরশ সৃষ্টি করেন……….” এরপর সুদীর্ঘ হাদিস রয়েছে।“
[আশরাফ আলী থানবী,নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিব,২৫ পৃঃ,মারকাযে মা’রিফ হাকিমুল উম্মত, বায়তুশ শরফ,থানাবন,মুজাফফর নগর,ইউপি, ভারত থেকে প্রকাশিত]
✌হযরত জাবের رضي الله عنه এর বর্ণিত হাদিসটি বর্ণনা করে তিনি এর ব্যাখ্যায় লিখেন-“এ হাদিস দ্বারা বাস্তবিক পক্ষে সর্বপ্রথম নূরে মুহাম্মদী (ﷺ)-সৃষ্টি হওয়া প্রমাণিত।কেননা যেসব সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রথম সৃষ্টি বলে হাদিসে বর্ণনায় এসেছে।ওইসব সৃষ্টি ‘নূরে মুহাম্মদী’ থেকে পরে সৃষ্টি হবার বিষয়টি আলোচ্য হাদিস দ্বারা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত।“
[নশরুত্তীব ফি যিকরেন্নাবিয়িল হাবিবঃ ২৫ পৃঃ]
✌শুধু তাই নয়, আশরাফ আলী থানবীকে সর্মথন করে তার বরাত দিয়ে দেওবন্দী ইউসুফ লুদইয়ানবী তার কিতাবে লিখেন:
اپ صلي الله عليه و سلم نے فرمايا-اءے جابر اللہ تعالي نے تمام اشیاء سے پھلے تیرے نبي كا نور اپنے نوسے… اس حديث سے نور محمدي صلي الله عليه و سلم كا اول الخلق هونا باوليت حقيقت ثابت هوا
অর্থ: হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, হে জাবের রদ্বিয়াল্লাহু আনহু ! আল্লাহ পাক সব কিছুর পূর্বে আঁপনার নবীর নূর মুবারক সৃষ্টি করেছেন। এ হাদীস শরীফ দ্বারা হাক্বীক্বী ভাবে প্রমানিত হলো যে , নূরে মুহম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন প্রথম সৃষ্টি !”
[ আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল ৩য় খন্ড ৮৩ পৃষ্ঠা]
🌹হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা:) হতে বর্নিত নূরের হাদিসখানা জাল নয়, সনদ সহীহ,রাবীগন নির্ভরযোগ্য এবং মুসান্নাফ কিতাবে এই হাদিস আছে এবং ছিল তার প্রমান :(৫ম পর্ব দেখুন)
★৩০. আপত্তিকারীরা এ হাদীস শরীফকেও জাল বলার ধৃষ্ঠতা দেখিয়েছে- ‘হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত,তিনি বলেন,আমি আরয করলাম,ইয়া রাসূলাল্লাহ্, আমার পিতা-মাতা আঁপনার প্রতি উৎসর্গ হোন,আঁপনি আমাকে অবহিত করুন, সর্বপ্রথম আল্লাহ্ পাক কোন্ বস্তু সৃষ্টি করেছেন? তিঁনি উত্তর দিলেন,‘‘হে জাবির, আল্লাহ্ পাক সর্বপ্রথম তাঁর নূর থেকে তোমার নবীর নূরকে সৃষ্টি করেছেন।’’ বস্তুত: সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলেন হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম।তিঁনি যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি এ বিষয়টি পবিত্র ক্বোরআন ও হাদীস শরীফ দ্বারা তো অকাট্যভাবে প্রমাণিত,অনুরূপ উম্মতের অধিকাংশ (প্রায় সব) আলিমও এ বিষয়ে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এমনকি ওলামায়ে দেওবন্দও এ ব্যাপারে একমত। অতএব,আমরা এখানে প্রথমত প্রমাণ করছি যে, রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম সৃষ্টি।অতঃপর আমরা আলোচ্য হাদীসগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করার প্রয়াস পাচ্ছি:
প্রথমত,আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
قُلْ اِنَّ صَلٰوتِیْ وَنُسُکِیْ وَمْحَیَایَ وَمَمَاتِی لِلہِ رَبِّ الْعَالَمِیْنَ لاَشَرِیْکَ لَهٗ وَبِذَالِکَ اُمِرْتُ وَاَنَا اَوُّلُ الْمُسْلِمِیْنَ
অর্থাৎ হে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম!) আঁপনি বলুন,নিশ্চয়ই আঁমার নামায,আঁমার হজ্ব, আঁমার ক্বোরবানী,আঁমার জীবন ও আঁমার মৃত্যু আল্লাহর জন্য,যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক।তাঁর কোন সমকক্ষ নেই। আর এটাই আঁমাকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।আর আঁমি সর্বপ্রথম মুসলমান।
[সূরা আন্‘আম: আয়াত-১৬৩, ১৬৪]
ও✌আলোচ্য আয়াতের শেষ বাক্য,যার অর্থ ‘আঁমি সর্বপ্রথম মুসলমান’একটি গবেষণাযোগ্য বাক্য। এখানে আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ কথা বলতে বলছেন যে,‘মহান স্রষ্টা এ জগতসমূহ সৃষ্টি করেছেন,যিঁনি সৃষ্টির কোন অংশীদারিত্ব বিহীন প্রতিপালক, তিঁনিই আঁমাকে এ মর্যাদা দান করেছেন যে,সৃষ্টিতে সবার আগে তাঁর সম্মুখে মস্তক অবনতকারী আঁমিই। অন্য কোন সৃষ্টি ছিল না,যা মাথা অবনত করতো এবং তাঁর রাবূবিয়াতকে মেনে নিতো।’ দেখার বিষয় হলো এ সৃষ্টি জগতে কোন্ কোন্ সৃষ্টি আল্লাহ্ তা‘আলাকে সেজদা করে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র ক্বোরআনে বর্ণিত হয়েছে-
وَلَهٗ اَسْلَمَ مَنْ فِی السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ طَوْعًا وَکَرْهًا وَاِلَیْهِ یُرْجَعُوْنَ
অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে, প্রত্যেকে স্বেচ্ছায় কিংবা বাধ্য হয়ে তাঁর আনুগত্য অবলম্বন করেছে। আর সবকিছু তাঁরই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।
[আলে ইমরান]
♠অপর আয়াতে বর্ণিত হয়েছে-
اِنْ کُلُّ مَنْ فِی السَّمٰوَاتِ وَالْاَرْضِ اِلَّا اَتَی الرَّحْمٰنَ عبدًا
অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যারা অবস্থান করছে, তারা আল্লাহর নিকট বান্দা হিসেবে উপস্থিত হবে।যেহেতু হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলাইহি ওয়া সাল্লাম সৃষ্টির মধ্যে সর্বপ্রথম সেজদাকারী, ইবাদতকারী, আল্লাহর বান্দা এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান স্থাপনকারী, সেহেতু প্রমাণিত হলো- তাঁর আগে আল্লাহ্র কোন সৃষ্টি ছিল না। যদি কোন সৃষ্টির অস্তিত্ব থাকত, তাহলে সে-ই আল্লাহ্ তা‘আলার প্রতি সর্বপ্রথম ঈমান আনত এবং আনুগত্য স্বীকার করত।
♠দ্বিতীয়ত, আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
وَمَآ اَرْسَلْنٰاکَ اِلاَّ رَحْمَةً لِلْعَالَمِیْنَ
অর্থাৎ হে প্রিয় রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়কা ওয়াসাল্লাম) আমি আপনাকে জগতসমূহের জন্য রহমত করেই প্রেরণ করেছি।
✌আলোচ্য আয়াতের প্রতি যদি গভীরভাবে দৃষ্টি দেয়া হয়,তাহলে রহমতের বিভিন্ন পর্যায় দেখা যায়, যা জগত সৃষ্টি ও তার লালন-পালনে কার্যকর ভূমিকা রাখে। কোন সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রথম রহমত হলো তাঁকে অস্তিত্ব দান করা।যেমনিভাবে অস্তিত্ব লাভ করা রহমত,তেমনিভাবে তাঁর অস্তিত্ব টিকে থাকা এবং পর্যায়ক্রমে পূর্ণতা লাভ করাও রহমত।সকল রহমত যে কোন সৃষ্টির জীবনের ক্ষেত্রে পতিত হয়,ওইসব তাঁর অস্তিত্ব হবার উপর সীমাবদ্ধ। যদি কোন সৃষ্টি অস্তিত্বই লাভ না করে, তাহলে তাঁর প্রতি রহমতের প্রশ্নই আসে না। সুতরাং সর্বপ্রথম রহমত হলো কোন সৃষ্টিকে অস্তিত্ব দান করা।এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
هَلْ اَتٰی عَلَی الْاِنْسَانِ حِیْنٌ مِّنَ الدَّهْرِ لَمْ یَکُنْ شَیْءً مَّذْکُوْرًا
অর্থাৎ ‘নিশ্চয় মানুষের উপর এমন এক সময় অতীত হয়েছে, যখন সে কোন উল্লেখযোগ্য বস্তু ছিল না।’ [৭৬:১]
✌এ বিষয়টি স্মরণ করার জন্য পবিত্র ক্বোরআনে মানবজাতিকে বারবার তাগিদ দেয়া হয়েছে। যেসব আয়াত দ্বারা এ বিষয়টি স্পষ্ট করাই মূল উদ্দেশ্য যে, কোন সৃষ্টির প্রতি আল্লাহ তা‘আলার সর্বপ্রথম রহমত হলো-
0 মন্তব্যসমূহ