মুসলিমদের পরিচয়, মুসলিম ধর্ম কিবাভে আসলো, ইসলাম ধর্মের ইতিহাস,

মাদের পরিচয় আমি একজন মুসলিম হিন্দুদের গ্রন্থ মনুসংহিতায় পাঁচজন স্ত্রী থাকার কথা উল্লেখ আছে। শ্রীকৃষ্ণের ছিল শত পত্নী ও উপপত্নী। (মনুসংহিতা, অধ্যায় : ৯, শ্লোক : ১৮৩) তত্কালীন আরবেও এমন বহু বিবাহ প্রচলিত ছিল। কিন্তু মুহাম্মদ (সা.)-এর বিয়ে প্রায় সবগুলোই মানবিক, একটি কোরআনের আয়াতের বাস্তবায়ন, দু-একটি ইসলামী শরিয়া বাস্তবায়ন। কেউ কেউ ছিলেন মহানবী (সা.)-এর বৃহত্তর পরিবারের সদস্য, ফুফাতো বোন অথবা চাচাতো বোন। অনেক বিধবা-অসহায় নারীকে তিনি নিজ স্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে সম্মানিত করেছেন। একজন বাদে কেউই কুমারী ছিলেন না; বরং মহানবী (সা.)-এর সঙ্গে অনেকের বিয়ে হয়েছিল, যাঁদের অনেক সন্তান ছিল, তা নিয়েই। মহানবী (সা.)-এর এসব বিয়ের মধ্যে কোনো শারীরিক চাহিদাও ছিল না। বরং বিভিন্ন গোত্রের সঙ্গে তিনি বিয়ের মাধ্যমে একটি শক্তি সমাবেশও করে থাকবেন, যা দেখে তত্কালীন কাফের-মুশরিকরাও সন্ত্রস্ত হয়ে উঠেছিল। ইসলামী শরিয়ায় এ জন্য শারীরিক প্রয়োজনে অধিক স্ত্রী রাখার প্রবণতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সীমারেখায় অনধিক চার স্ত্রী থাকলেও সবার অধিকার আদায় না করতে পারলে তাকে অন্যায় ও জুলুম বলে সাব্যস্ত করা হয়েছে। পুত্র ১. কাসেম (তাঁর নামানুসারে মহানবী (সা.)-এর উপনাম হয়েছিল আবুল কাসেম)। ২. তাহের (অনেক ঐতিহাসিক বলেছেন, তাঁর নাম ছিল ‘আবদুল্লাহ’)। ৩. ইব্রাহিম। (তিনি ছিলেন মারিয়া কিবতিয়া (রা.)-এর গর্ভজাত)। কন্যা : ৪. ফাতিমা ৫. জয়নাব ৬. রোকাইয়া ৭. উম্মে কুলসুম। ইব্রাহিম ছাড়া উল্লিখিত সন্তানদের সবাই ছিলেন খাদিজা (রা.)-এর গর্ভজাত। মুহাম্মদ (সা.)-এর এই তিন পুত্রসন্তানের সবাই শৈশবে মারা যান। তবে কাসেম সওয়ারিতে আরোহণ করতে পারতেন, এমন বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন। প্রফেসর তোহুর আহমদ হিলালী সৃষ্টির ধর্মই হলো ইসলাম। পাহাড়-পর্বত, নদী-নালা, সাগর-মহাসাগর, গ্রহ-তারা-নক্ষত্র, জীব-জানোয়ার এই বিশ্বে যা কিছু আছে এমনকি আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সবকিছুই মুসলিম, আর মুসলিম না হয়ে উপায়ও নেই। অর্থাৎ প্রকৃতির রাজ্যে সবাই আল্লাহর বিধান মেনে চলছে। শুধু মানুষের রয়েছে ভিন্ন আর একটি সত্তা যেটাকে বলা হয় নৈতিক সত্তা অর্থাৎ ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায় বোধ-উপলব্ধি এবং এ কারণেই মানুষ শ্রেষ্ঠ। মানুষের মাঝে বিবেকবোধের পাশাপাশি দান করা হয়েছে কিতাব ও রাসূল যা অন্য কোনো সৃষ্টিকে দেওয়া হয়নি। সবাই আল্লাহর দেওয়া নিয়মের অধীন। আল্লাহর সকল সৃষ্টি ও আমাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে কাজে লাগানোর ক্ষমতা আল্লাহ মানুষকেই কেবল দান করেছেন। এসব সৃষ্টিকে কল্যাণ ও অকল্যাণ সকল কাজে ব্যবহার করা সম্ভব। যদি আল্লাহর নাফরমানি বা অকল্যাণকর কাজে ব্যবহার করা হয় তাহলে জমিনসহ অন্যান্য সৃষ্টি এবং হাত-পা-জিহবা, চোখ-কান আল্লাহর আদালতে সাক্ষ্য দিবে, কারণ আল্লাহই তাদেরকে সেই নির্দেশ প্রদান করবেন। আল্লাহপাক তাঁর সেরা সৃষ্টি মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি দান করেছেন যার কারণে মন্দ কাজে বিবেক তিরস্কার করে। বিবেক-বুদ্ধির পাশাপাশি দান করেছেন নবী ও রাসূল। আদম (আ) প্রথম মানুষ হওয়ার সাথে সাথে ছিলেন একজন নবী। সকল নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারীরা ছিলেন মুসলিম। মুসলিম অর্থ অনুগত অর্থাৎ যারা আল্লাহর বিধান মেনে চলে তারা মুসলিম (অনুগত) এবং যারা অমান্য করে তারা কাফের (অমান্যকারী)। আমরা নিজেদের পরিচয় দেই ‘মুসলিম’ বলে অর্থাৎ আমরা আল্লাহর অনুগত এবং এই মুসলিম নামকরণ স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের। তাঁর বাণী, ‘তোমাদের পিতা ইবরাহিমের আদর্শের উপর প্রতিষ্ঠিত হও। আল্লাহ তোমাদের নামকরণ করেছেন ‘মুসলিম’ পূর্বেও এবং এই কিতাবেও, যাতে করে এই রাসূল তোমাদের উপর সাক্ষী হয় আর তোমরাও সাক্ষী হও মানবজাতির উপর।’- (সূরা হজ : ৭৮)। হজরত ইবরাহিম (আ) তাঁর পুত্র ইসমাইল (আ)-কে সাথে নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের দু’জনকেই তোমার প্রতি ‘মুসলিম’ (অনুগত-আত্মসমর্পিত) বানাও, আর আমাদের বংশধরদের থেকেও তোমার প্রতি একটি ‘মুসলিম উম্মাহ’ (অনুগত জাতি) বানাও’- (সূরা বাকারা : ১২৮)। ইহুদি, খ্রিষ্টান ও মুসলিম সবাই ইবরাহিম (আ)-এর বংশধর কিন্তু আল্লাহপাক ইবরাহিম (আ)-কে উপস্থাপন করেছেন এভাবে- ‘ইবরাহিম ইহুদিও ছিল না, নাসারাও (খ্রিষ্টান) ছিল না, বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না’- (সূরা আলে ইমরান : ৬৭)। সর্বাবস্থায় নিজের পরিচয় এভাবে প্রদান করা হয়েছে, ‘বলো, আমার সালাত, আমার কুরবানি, আমার জীবন এবং আমার মৃত্যু আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জন্য। তাঁর কোনো শরিক নেই। এরই নির্দেশ আমাকে দেয়া হয়েছে এবং আমিই প্রথম মুসলিম’- (সূরা আনআম : ১৬২-১৬৩)। নবী-রাসূল ও তাঁদের অনুসারী সবাই নিজেদেরকে মুসলিম পরিচয় দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন, ‘অতঃপর ঈসা যখন তাদের থেকে কুফরি অনুভব করলো, তখন তাদের বললো, আল্লাহর পথে কারা হবে আমার সাহায্যকারী? তখন হাওয়ারিরা বললো, আমরা হবো আল্লাহর পথে সাহায্যকারী। আমরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলাম। তুমি সাক্ষী থাকো, আমরা মুসলিম (আত্মসমর্পণকারী)’- (সূরা আলে ইমরান : ৫২)। তিনি আরো বলেন, ‘ঐ ব্যক্তির চেয়ে ভালো কথা আর কার হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং নিজে আমলে সালেহ করে আর বলে, নিশ্চয়ই আমি একজন মুসলিম (আল্লাহর অনুগত)’- (সূরা হামিম আস সাজদাহ : ৩৩)। আল্লাহপাক সতর্ক করে দিয়েছেন, মুসলিম না হয়ে যেন তাঁর কাছে ফিরে না আসা হয়। তাঁর বাণী, ‘হে ইমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যেভাবে তাঁকে ভয় করা উচিত এবং মুসলিম না হয়ে মরিও না।’- (সূরা আলে ইমরান : ১০২)। সাথে সাথে তাঁর অনুগত (মুসলিম) বান্দাদের জান্নাতের ওয়াদা প্রদান করেছেন। তাঁর বাণী, ‘যারা আমার আয়াতসমূহের উপর ঈমান এনেছিলে এবং মুসলিম হয়েছিলে, সেদিন তাদের বলা হবে, হে আমার বান্দারা, আজ তোমাদের কোনো ভয় নেই এবং কোনো দুঃখও আজ তোমাদের স্পর্শ করবে না। তোমরা দাখিল হও জান্নাতে তোমাদের স্ত্রী/স্বামীকে নিয়ে আনন্দচিত্তে।’- (সূরা যুখরুফ : ৬৮-৭০)। ঈমানদার জনগোষ্ঠীর একটিই প্রার্থনা, তাদের মৃত্যু যেন হয় মুসলিম অবস্থায়। জাদুকরদের ঈমান আনার পর ফেরাউন বলেছিল, আমি বিপরীত দিক থেকে তোমাদের হাত ও পা কেটে দেবো, সেই শাস্তি ঘোষণার পর জাদুকরদের দোয়া ছিল, ‘হে আমাদের প্রভু! আমাদের সবর করার শক্তি দাও এবং আমাদের মৃত্যু দান করো মুসলিম হিসেবে।’- (সূরা আ’রাফ : ১২৬)। ইউসুফ (আ)-এর দোয়া ছিল, ‘এই পৃথিবীর জীবনে এবং আখেরাতে তুমিই আমার অভিভাবক! মুসলিম হিসেবে আমাকে মৃত্যু দান করো এবং আমাকে সাথি বানিয়ে দাও সালেহ লোকদের।’ (সূরা ইউসুফ : ১০১)। মুসলিম হিসেবে নামকরণ, মুসলিম পরিচয় দান, মুসলিম না হয়ে মরার ক্ষেত্রে ভীতি প্রদর্শন, মুসলিম হিসেবে মৃত্যু কামনা করা, মুসলিমদের সুসংবাদ দান ইত্যাদি নানা বিষয়ে অসংখ্য আয়াতের মধ্য থেকে এখানে কুরআনের কিছু উদ্ধৃতি পেশ করা হয়েছে। মূলত আল্লাহপাক তাঁর নিয়ামতপ্রাপ্ত বান্দাদের মুসলিম হিসেবেই আখ্যায়িত করেছেন এবং এটিই আমাদের পরিচয়। এ ছাড়া আর কোনো পরিচয় নেই। আমাদের মাঝে নানা ফেরকা ও বিভক্তি সবই শয়তানের চালবাজি। দুর্ভাগ্য, আজ আর আমরা মুসলিম পরিচয়ে গর্ববোধ করি না। আমরা এখন পরিচয় দেই: শিয়া-সুন্নি, আহলে কুরআন, আহলে হাদিস, হানাফি, মালেকি, শাফেয়ি, হাম্বলি, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, আরো কত কী? শুধুই কি তাই? মসজিদগুলো পর্যন্ত পৃথক করে ফেলেছি। আমরা একটু ভেবে দেখি, আমাদের এই বিভক্তি কী নিয়ে? ফরজ-ওয়াজিবে আমাদের মাঝে কোনো পার্থক্য নেই। পার্থক্য সুন্নাত-মুস্তাহাব নিয়ে। মুস্তাহাব আমলের মাঝে পার্থক্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সা.-এর আমলেই ছিল। উম্মাহর ঐক্যের ভিত্তি হলো নামাজ। আল্লাহর বাণী, ‘তারা যদি তওবা করে, নামাজ কায়েম করে এবং জাকাত আদায় করে তাহলে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই।’ (সূরা তওবা : ১১)। কোনো ব্যক্তি তওবা করে এবং দু’টি মৌলিক ইবাদত নামাজ ও জাকাত পালন করে তাহলে সে ইসলামী সমাজে অন্যান্য মুসলমানের মতো সামাজিক ও আইনগত সকল অধিকার ভোগ করবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ